Bandwidth(ব্যান্ডউইথ) কি? বাংলাদেশে ব্যান্ডউইথের অপব্যবহার !

Bandwidth(ব্যান্ডউইথ) কি?

bandwidth
Bandwidth(ব্যান্ডউইথ) বলতেএকটি নেটওয়ার্ক বা মডেম কানেকশনের মধ্যদিয়ে কি পরিমাণ ডাটা প্রেরিত হচ্ছে তা বোঝায়। এটি সাধারণত “বিটস পারসেকেন্ড” বা bps দ্বারা পরিমাপ করা হয়। ব্যান্ডউইথকে একটি হাইওয়েরমধ্য দিয়ে কার …চলাচল দ্বারা তুলনা করলে ব্যাপারটি সহজে বোঝা যায়।এখানে হাইওয়ে হচ্ছে নেটওয়ার্ক আর কার হচ্ছে প্রেরণকৃত ডাটা।হাইওয়ে যতবেশি প্রশস্থ তত বেশি কার একসাথে চলাচল করতে পারে। তার মানে তত বেশি কারএকসাথে নিজের গন্তব্যে পৌছাঁতে পারে। একই নিয়ম কম্পিউটার ডাটার ক্ষেত্রেপ্রযোজ্য। যত বেশি ব্যান্ডউইথ বেশি ডাটা বা তথ্য একসাথে একটি নির্দিষ্টসময়ের মধ্যে প্রেরণ করা যায়।

বাংলাদেশে ব্যান্ডউইথের অপব্যবহার !

সম্প্রতি একটি জাতীয় দৈনিক আমাদের ইন্টারনেটের ব্যান্ডউইথ নিয়ে খুব গুরুত্বপূর্ণ এক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। ওই প্রতিবেদন থেকে যা পাওয়া যায়-
১. আমাদের ২৬০ দশমিক ৬ গিগাবাইট ব্যান্ডউইথ আছে। আমরা ব্যবহার করি সর্বোচ্চ ৩০ গিগাবাইট। বাকি সব অপ্রয়োজনে পড়ে আছে।
২. বাকি ২৩০ গিগাবাইট কাজে লাগিয়ে আমরা ইন্টারনেটের গতি অনেক বাড়াতে পারতাম বা পারি। কিন্তু সেটা করা হয়নি। কেন? কর্তৃপক্ষের এ ব্যাপারে কোনো সদুত্তর নেই।
৩. আমাদের ১৬০ দশমিক ৬ গিগাবাইট ব্যান্ডউইথ ছিল। এই ব্যান্ডউইথই অব্যবহৃত পড়ে ছিল। তবু আইডিবি থেকে লোন নিয়ে আরো ১০০ গিগাবাইট যোগ করা হয়। এখন আরো ১০০ গিগাবাইট কেনার প্রক্রিয়া চলছে! বর্তমানে ২৬০ গিগাবাইট অব্যবহৃত পড়ে আছে, তবু আরো ১০০ গিগাবাইট কেনার মানে কি?!!
৪. ভারতের ‘দ্য ইকোনমিক টাইমস’ খবর দিয়েছে, বাংলাদেশ ভারতের টাটা টেলিকমিউনিকেশনের কাছে ১০০ গিগাবাইট ব্যান্ডউইথ প্রতি বছর মাত্র ১ কোটি ডলারে (৮০ কোটি টাকা) বিক্রি করার চুক্তি করতে যাচ্ছে। অথচ ১০০ গিগাবাইট ব্যান্ডউইথের বাজারমূল্য ১০ হাজার কোটি টাকা! তার মানে ৯ হাজার ৯২০ কোটি টাকা লস দিয়ে ব্যান্ডউইথ বিক্রি করতে যাচ্ছে আমাদের মাথা মোটা কর্তাব্যক্তিরা …!!!
এই যে অসামঞ্জস্যতা, অনিয়ম- এসবই বাংলাদেশের সর্বোচ্চ স্তর থেকে সর্বনিম্ন স্তর পর্যন্ত আষ্টেপৃষ্ঠে বাসা বেঁধেছে। প্রয়োজনের তুলনায় ব্যান্ডউইথ পড়ে আছে, তবু আরো কেনার উদ্যোগ তো আসলে হরিলুট করারই নামান্তর! আর ভারতকে প্রায় ‘মাগনা’ ১০০ গিগাবাইট ব্যান্ডউইথ দেয়া নিয়ে প্রশ্ন তুললেই আপনি-আমি ‘নব্যরাজাকার’-এর ট্যাগ খাব! সুতরাং কোনো প্রশ্ন না তুলে কানে তুলা গুজে নীরব থাকুন।

প্রতি সেকেন্ডে ১৩৮ কোটি টাকার ব্যান্ডউইথ ফেলে রাখে সরকার”

বাংলাদেশের মোট ব্যান্ডউইথ ক্যাপাসিটি (ইন্টারনেট সক্ষমতা) প্রতি সেকেন্ডে ২০০ গিগাবাইট। এর মধ্যে মাত্র ৩২ গিগাবাইট ব্যবহার হচ্ছে। ব্যবহার না হওয়া প্রতি সেকেন্ডের ব্যান্ডউইথের দাম ১৩৮ কোটি টাকা। অন্যদিকে সরকার বলছে অবকাঠামো না থাকায় এ মহামূল্যবান ব্যান্ডউইথ ব্যবহার করা যাচ্ছে না।
বর্তমানে প্রতি মেগাবাইট পার সেকেন্ড ব্যান্ডউইথের দাম ৮ হাজার টাকা। এই হিসাবে ফেলে রাখা ১৬৮ গিগা ব্যান্ডউইথের দাম ১৩৮ কোটি। অন্যদিকে ব্যবহৃত ব্যান্ডউইথের দাম মাত্র ২৭ কোটি টাকা।
তথ্যপ্রযুক্তি সংশ্লিষ্টদের আশঙ্কা, একশ্রেণীর ব্যবসায়ীকে সুবিধা দিতেই মহামূল্যবান ব্যান্ডউইথ ব্যবহার না করে ফেলে রাখা হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখছে সরকারেরই একটি অংশ। এ ব্যান্ডউইথ দিয়ে চলছে রমরমা অবৈধ ভিওআইপি (ভয়েস ওভার ইন্টারনেট প্রটোকল) ব্যবসা। ফলে ভিওআইপি খাত থেকে দিনকে দিন সরকারের আয় কমছে।
ইদানীং ব্যান্ডউইথ নিয়ে সরকারি-বেসরকারি হিসাবের ফাঁক-ফোকরগুলো গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। অভিযোগ আছে, সরকারের ব্যান্ডউইথ ক্যাপাসিটি ব্যবহার হচ্ছে অবৈধ ভিওআইপি ব্যবসায়। যতদিন দেশের ব্যান্ডউইথ ক্যাপাসিটি ৪৫ গিগা ছিল ততদিন মাত্র ১০ গিগা ব্যবহার করা হতো। ১৪৫ ও ১৬৪ গিগা যখন পাওয়া যেত তখন ব্যবহার হতো ২৬ গিগাবাইট। বাকিটা অব্যবহৃতই থাকত।
সরকারি হিসাব অনুযায়ী অব্যববহৃত ব্যন্ডউইথের পরিমাণ ১৬৮ গিগা। অভিযোগ উঠছে, একটি সিন্ডিকেট অবশিষ্ট ব্যান্ডউইথ অবৈধ ভিওআইপি কলে গোপনে ডাইভার্ট করে প্রতিদিন প্রায় ১০ কোটি মিনিট আন্তর্জাতিক কল আনছে। এর সঙ্গে জড়িত প্রভাবশালী মহলের কারণেই বিটিআরসির কোনো উদ্যোগই ভিওআইপি বন্ধে জোরালো কোনো ভূমিকা রাখতে পারছে না।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ সাবমেরিন ক্যাবল কোম্পানি লিমিটেডের (বিএসসিসিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. মনোয়ার হোসেন বলেন, ‘দেশে নেটওয়ার্ক সক্ষমতা না থাকায় আমরা পুরো ব্যান্ডউইথ ব্যবহার করতে পারছি না।’ সারাদেশে ফাইবার অপটিক ক্যাবলের নেটওয়ার্ক তৈরি করা না গেলে এর ব্যবহার বাড়বে না বলে তিনি উল্লেখ করেন। তিনি জানান, দেশের মোবাইলফোনের গ্রাহক বেড়েছে কিন্তু ভয়েসে ব্যান্ডউইথ বাড়ার সম্ভাবনা কম। ইন্টারনেটে ব্যান্ডউইথের ব্যবহার বাড়ছে কিন্তু তা আরো বাড়াতে জেলা-উপজেলা-ইউনিয়ন পর্যায়ে ফাইবার অপটিক নেটওয়ার্ক বাড়াতে হবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে সাবমেরিন ক্যাবলে গত ৩ বছরে ৩০ লাখ টেরাবাইটের বেশি কনটেন্ট অব্যবহৃত ছিল। অব্যবহৃত ব্যান্ডউইথের বাজার মূল্য বিশাল অংকের। আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ ৩০ হাজার কোটি টাকার। দিনে দিনে এই ক্ষতির পরিমাণ বাড়ছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ভিওআইপির পরিচালনার ভিএসপি লাইসেন্স প্রাপ্ত এক ব্যবসায়ী বলেন, ‘বাংলাদেশে প্রতিদিন গড়ে আন্তর্জাতিক কল আসে ১৩ কোটি মিনিট। প্রতি কলে ৩ সেন্ট বা প্রায় আড়াই টাকা হারে এ খাত থেকে সরকার বিপুল রাজস্ব আয় করার কথা। কিন্তু দৈনিক যে পরিমাণ কল টার্মিনেশন হচ্ছে তার মাত্র ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ আসে বৈধ পথে বাকিটা আসে অবৈধ কল টার্মিনেশনের মাধ্যমে। বৈধ কল টার্মিনেশন থেকে সরকার পাচ্ছে প্রতিদিন চার থেকে সাড়ে চার কোটি মিনিট কল। অবশিষ্ট মিনিট কল চলে যাচ্ছে অবৈধ কল টার্মিনেশন ব্যবহারকারীদের পকেটে।’ তিনি প্রশ্ন করেন ‘অব্যহৃত ব্যান্ডউইথ অবৈধ ভিওআইপিতে ব্যবহার না হলে অবৈধ ভিওআইপি হয় কীভাবে?’
প্রযুক্তি বিশ্লেষক জাকারিয়া স্বপন এ বিষয়ে বলেন, ‘বারবার বলা সত্ত্বেও ফেলে রাখা ব্যান্ডউইথ সাধারণ ব্যবহারকারীদের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হচ্ছে না। ফলে এ ধরনের অভিযোগ ওঠাই স্বাভাবিক। প্রযুক্তিগতভাবে এর বিরোধিতা করার কোনো জায়গা নেই। অবৈধ ভিওআইপিতে ব্যান্ডউইথ ডাইভার্ট হতে পারে বলে তিনি মনে করেন। ব্যাখ্যা হিসেবে তিনি একটা হিসাব উপস্থাপন করে বলেন, ‘দেশে ভিওআইপি কলের সংখ্যা প্রতিদিন বাড়ছে। এই কল আসতে ব্যান্ডউইথের দরকার পড়ে। তা পাওয়া যাচ্ছে কোথা থেকে। দেশের ফেলে রাখা ব্যান্ডউইথই কেউ না কেউ দিচ্ছে ওইসব ব্যবসায়ীদের সরবরাহ করছে। এই বিষয়গুলো কখনো অডিট হয় না। তাই ধরাও পড়ে না।’

মন্তব্যসমূহ

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি